
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে টিকার পেছনে ছুটছে সবাই। সেই দৌড়ে বেশ এগিয়েও গেছে ভারত। গণটিকাকরণ
কর্মসূচিচালাতে তাদের হাতে আছে দুটি টিকা। কিন্তু সর্বশেষ এক জরিপের ফল বলছে, টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করতে
রাজি ননবেশির ভাগ ভারতীয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এখনই টিকা নেবেন কি না, এ নিয়ে
দ্বিধায় রয়েছেন। অনলাইনভিত্তিক সমীক্ষা পরিচালনাকারী সংস্থা লোকাল-সার্কেলস এ জরিপ চালিয়েছে। টিকা নিয়ে এমন
দ্বিধাদ্বন্দ্বের খবর শুধু ভারতে নয়, অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমেও আসছে। বাংলাদেশে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে এমনটি না হয়,
তা নিয়ে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের
(আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টিকা নিয়ে সংশয় সবখানেই কমবেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে এটি না হয়, সে জন্য কাজ চলছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কী কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে, তার জবাব কী হবে, সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে। টিকার
উপকারিতাসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে বুকলেট করে তা প্রচার করা হবে।
টিকা দেওয়া শুরু করার আগেই এটি করা হবে।
বিজ্ঞাপন ভারতে করোনার সংক্রমণের হার কমে গেছে ভারতে করোনার সংক্রমণের হার কমে গেছে ছবি: এএফপি ভারতের
ওষুধ মহানিয়ন্ত্রকের (ডিসিজিআই) দপ্তর ইতিমধ্যে করোনার টিকা কোভিডশিল্ডের জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্ভাবিত এ টিকা ভারতে উৎপাদন করছে
স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। অবশ্য গণহারে এ টিকার ব্যবহার শুরুর আগে আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এ
ছাড়া স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা কোভ্যাক্সিনও ডিসিজিআইয়ের সবুজ সংকেত পেয়েছে। যদিও এ
টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) এখনো শেষ হয়নি। বিজ্ঞানভিত্তিক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ
ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ টিকার অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচনা উঠেছে। লোকাল-সার্কেলস পরিচালিত জরিপে
অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নকরা হয়, ‘ভারতে প্রথম কোভিড-১৯ টিকা এখন অনুমোদন পেয়েছে। এ টিকা গ্রহণের বিষয়ে আপনার
মতামত কী?’ মোট ৮হাজার ৭২৩ জনের কাছ থেকে উত্তর এসেছে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ বলেছেন, টিকা পাওয়ামাত্রই
তাঁরা গ্রহণ করবেন। করোনার টিকা নিয়ে সংস্থাটি জনসাধারণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে গত বছরের অক্টোবর
মাস থেকে। এর মাধ্যমে তারা বোঝার চেষ্টা করছে, টিকা গ্রহণে অনীহা বা দ্বিধাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে নাকি
অপরিবর্তিত থাকছে।
অক্টোবর মাসে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তখন কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় থাকা ভারতীয়র সংখ্যা ছিল ৬১ শতাংশ।
পরে ফাইজার ও মডার্না তাদের উদ্ভাবিত টিকার ব্যাপক কার্যকারিতার ফল প্রকাশ করলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
নভেম্বরে টিকা গ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় থাকা ভারতীয়র সংখ্যা ৫৯ শতাংশে নেমে আসে। সেরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরির খবরে ভারতে নতুন আশার সঞ্চার করে। কিন্তু লোকাল-সার্কেলসের জরিপে দেখা যাচ্ছে, এ খবর
টিকা নিয়ে ভারতীয়দের দ্বিধা আরও বাড়িয়েছে। এখন করোনার টিকা নেবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ৬৯ শতাংশ ভারতীয়।
টিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের খবর শুধু ভারতে নয়, অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমেও আসছে টিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের খবর শুধু ভারতে
নয়, অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমেও আসছেছবি: এএফপি টিকা নিয়ে এ অনীহার পেছনে বিভিন্ন কারণ সামনে আসছে। বড় দুটো
কারণ হচ্ছে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগে টিকার কার্যকারিতার ফল নিয়ে সংশয়। জনসাধারণের পাশাপাশি
স্বাস্থ্যকর্মীরাও এ দুটো কারণকে বড় করে দেখছেন।
গত ডিসেম্বরে আরও একটি স্বতন্ত্র জরিপ চালিয়েছেন লোকাল-সার্কেলসের সদস্য চিকিৎসক আবদুল গফুর।
এতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদেরও বড় অংশটি (৫৫ শতাংশ) এখনই করোনার টিকা নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধায়
আছেন। বেশির ভাগই বলেছেন, তাঁরা হয় এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন, নয়তো এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত নন।
জরিপে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের মধ্যে আনুমানিক ৬০ শতাংশই কোভিড-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
টিকা গ্রহণে অনীহার ক্ষেত্রে আরেকটি কারণ হচ্ছে ভারতে করোনা সংক্রমণের হার কমে যাওয়া। এ ছাড়া টিকা দুটোর অনুমোদন
নিয়ে তড়িঘড়ি করার কারণেও একধরনের সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ
করেছেন।